অর্হণা
অর্হণা, ড. মোহাম্মদ আমীন-এর লেখা একটি উপন্যাস। উপন্যাসটি কেন পড়বেন? এর আগে যার ড. আমীনের লেখা স্যমন্তক
পড়েছেন, তারা মাত্রই বুঝতে পারছেন অর্হণা কেন পড়বেন। উপন্যাসে পাঠককে আকৃষ্ট করার, ঘটনার সঙ্গে একিভূত করার, জীবনবোধে উদ্দীপ্ত করার শেখার এবং জানার যত উপাদান থাকা প্রয়োজন তার সবকটি অর্হণা উপন্যাসে পাবেন। এটি স্যমন্তক সিরিজের দ্বিতীয় উপন্যাস। গ্রন্থটির আলোচনা করতে গিয়ে, হায়াৎ মামুদ লিখেছেন, অর্হণার পাণ্ডুলিপিটি, আমার বয়স ত্রিশ বছর কমিয়ে দিয়েছিল। পড়তে পড়তে আমি পৌঁছে গিয়েছিলাম বিংশ শতকের সত্তরের দশকে। আমার বর্তমান অবস্থানকে ভুলিয়ে দিয়েছিল উপন্যাসটির বৈচিত্র্যময় পরম্পরা। এমন অলৌকিক কাণ্ড যে উপন্যাস ঘটাতে পারে, সেটি কত আকর্ষণীয় এবং আত্মহরি হতে পারে তা সহজে অনুমেয়। আমি ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে আমি যত পাণ্ডুলিপি পড়েছি, তন্মধ্যে ‘অর্হণা’ যে কোনো বিবেচনায় নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠ। শ্রেষ্ঠত্বের অনেকগুলি কারণ আছে। আগে একটা বলেছি। আমি মনে করি, অর্হণা’ যিনিই পড়বেন, তাঁর কাছেই ভালো লাগবে, অভিভূত হবেন কারুময় সৌন্দর্য। এটি অর্হণা’র পাণ্ডুলিপিটাকে শ্রেষ্ঠ মনে হওয়ার অন্যতম কারণ। ঘটনা, খ্যাতিমান চরিত্রবর্গ, চরিত্রসমূহের সরব উপস্থিতি, রাজসিক আলোচনায় সর্বজনীন হিত, সাড়ম্বর দৃশ্যপট, দৃশ্যপটের মনোহর নৈসর্গিকতায় শহুরে বিমোহন, দলিতদের প্রতি মমতা, কিছু স্পর্শকাতর সম্পর্ক, হৃদয় আলোড়িত কথোপকথন, বুদ্ধিমত্তার অপূর্ব নিদর্শনপ্রসূত
দার্শনিক উপলব্ধি, মনোবৃত্তিক উদারতায় হৃদয়ভিত্তিক
জটিলতার স্বরূপ, প্রেম-ভালোবাসার নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং শিউরে তোলা পরিঘটনার পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহ প্রভৃতি আমাকে প্রবলভাবে মুগ্ধ করেছে।অর্হণা
যিনিই পড়ুন, মুগ্ধ হবেন, অভিভূত হবেন সোল্লাস প্রাপ্তির মাদকীয় ভাবনায়।
স্যমন্তক এর নায়িকা রচনা। ‘অর্হণা’তেও রচনা প্রধান
চরিত্রের একজন। প্রফেসর সাহিদা সুলতান অর্হণা সম্পর্কে বলেছেন, “অর্হণার পাণ্ডুলিপি পড়ে আমি আনন্দ, রোমাঞ্চ আর ঋদ্ধ সঞ্চয়নে অভাবনীয়ভাবে
অলংকৃত হয়েছি। এমন বৈচিত্র্যময় প্রেক্ষাপট একসঙ্গে আর কোনো উপন্যাসে পাইনি। বিশেষ করে মনোহর বাক্য-বিন্যাস ও হৃদয়মথিত কথোপকথন এবং হৃদয়ালোড়িত স্পর্শকাতর সম্পর্ক আমাকে মুগ্ধতার শেষ প্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রায় পুরো পৃথিবী এই উপন্যাসের ক্ষেত্র। উভয় বাংলার কালজয়ী কবিসাহিত্যিকগণ এই উপন্যাসের মূল চরিত্র। এছাড়াও রয়েছে বিশ্বসাহিত্যের
নামকরা কয়েকজন পণ্ডিত।”
বিংশ শতকের অর্ধশতাধিক খ্যাতিমান সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, কুটনীতিবিদ, রাজনীতিক, চিকিৎসক, সাংবাদিক এবং তাদের গুণান্বিত আলোচনার বিরল বাক্যে ‘অর্হণা’ সজ্জিত হয়েছে পাঠকদের জন্য। উপন্যাসের নায়ক-নায়িকা থেকে প্রায় সব চরিত্র খ্যাতিমান ও
অর্হণা উপন্যাসের ভূমিকা লিখেছেন হায়াৎ মামুদ। তিনি নিজেও উপন্যাসের একটি চরিত্র। তাঁর বর্ণনায়
অর্হণা কেমন উপন্যাস তা জানা যাক। তিনি বলেছেন, চরিত্র দিয়ে বর্ণিত ভূমিকাসমৃদ্ধ উপন্যাস ইতোঃপূর্বে আমি পড়িনি। তাই ‘অর্হণা’ ছিল আমার কাছে
একটি নতুন ধারণার বিকাশ। “সমাজ, রাষ্ট্র, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে প্রেম-ভালোবাসা আর মানবীয় মূল্যবোধের সুষমিত প্রগাঢ়ত্বের সঙ্গে এতগুলো বিস্ময়কর চরিত্রের চরিত্রায়ণ উপন্যাসটিকে করে তুলেছে অনবদ্য। চরিত্রের সঙ্গে কথোপকথন, সজ্জা আর তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা এতই নিবিড় যে, অনুভবকেও হার মানিয়ে দেয়। এমন একটি উপন্যাস বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করবে -- এ বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। আমি কামনা করি বা না-ই করি, উপন্যাসটি যোগ্যতাবলে পাঠকের হৃদয়ে নিজের আসনটি গেড়ে নিতে সক্ষম হবে। আমি মনে করি, কালক্রমে ড. মোহাম্মদ আমীনের অর্হণা’ বাংলা সাহিত্যের অর্হণা হয়ে সবার মনে সাড়া দিতে সক্ষম হবে।” অধ্যাপক টিআই চৌধুরীর মতে, “উপন্যাসে চরিত্রবর্গের আলাপচারিতায় সমকালীন সাহিত্য-সংস্কৃতি, সংস্কার-কুসংস্কার, ধর্ম, আর্থ-রাজনীতি ও সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে যে তথ্য-উপাত্ত নির্দেশিত হয়েছে তা গভীর পর্যবেক্ষণের সঙ্গে অভাবিত আন্তরিকতাপুষ্ট ঋদ্ধ দ্যোতনায় দ্যোতিত। সর্বোপরি উপন্যাসের নায়িকা কল্পনার সঙ্গে নায়কের ভীষণ স্পর্শকাতর সম্পর্ক পাঠককে নুতন ভাবনায় মারাত্মক দ্বিধায় ফেলে দেবে।” অর্হণার আলোচনায় বিশিষ্ট সমালোচক এরশাদ হোসেন আবীর লিখেছেন, এমন জীবন্ত উপন্যাস আমি আর পড়িনি। পরিচিত নায়ক-নায়িকাদের নিয়ে লেখা উপন্যাস পড়তে কত ভালো লাগে, তা না পড়লে শুধু
বলে বা লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এমন উপন্যাস যে কোনো পাঠকের মনে মনোহর শিহরন জাগিয়ে তুলে প্রেমে আর বোদ্ধমায় সমৃদ্ধতায়। গ্রন্থটির প্রতিটি লাইন অমিয় বাণীর
চিরন্তন বাস্তবতা। প্রতিটি লাইন স্মরণীয় বাণী হয়ে অনেকদিন মোহিত রাখবে পাঠককে।
ড. মোহাম্মদ আমীন ও শ্যামল পাল |
উপন্যাসটি কেমন হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলব, ভাষা মানুষকে এখনো এমন হাতিয়ার দিতে পারেনি, যদ্দ্বারা মানুষ তার সব
উপলব্ধিকে বাক্য-ভাষায় অন্যের কাছে প্রকাশ করতে পারে। তেমনি অর্হণার পাণ্ডুলিপি পারে আমার অনুভবে সঞ্চারিত আবেশরাশিকে সম্পূর্ণরূপে কথায় প্রকাশ করতে পারব না। শুধু বলবো, অসাধারণ, অসাম, হৃদয়কাড়া একটি উপন্যাস।যার প্রত্যেকটি লাইন নীরব চন্দ্রিমায় রাতের কোলে ঘেষেও জোছনাকে বাক্য বানিয়ে পাঠকের মনে বিপুল ঝড় তুলে দিতে নিমিষ চিন্তার মতো কিন্তু প্রকৃতির মতো বিরল স্থায়িত্বে। তাই বইটি কেমন? প্রশ্নের উত্তরে দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারি, এর অবিকল উত্তর পেতে হলে ‘অর্হণা’ পড়তে হবে। অর্হণা এমন একটি উপন্যাস যা আপনাকে বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবিসাহিত্যিক
ও পণ্ডিতবর্গের
বন্ধু বানিয়ে দিতে সক্ষম হব। আমি বলব, অর্হণা শুধু উপন্যাস নয়, পাঠকের তীর্থভূমি। যেখানে প্রকৃতি বিছিয়ে রেখেছে তার অশেষ ঐশ্বর্য থরে থরে। ‘অর্হণা’রূপ উপন্যাসের তীর্থক্ষেত্র
থেকে আপনি পেতে পারেন সাহিত্যের নির্ঝর সমৃদ্ধি, বিমল মুগ্ধতা। পরিচিত হতে পারেন বাংলা ও বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে। উপন্যাসটি পড়লে আপনি জীবনবোধে উদ্দীপত্ত হবেন, কল্যাণে বারিত হবেন এবং মননশীলতায় আসবে মুগ্ধকর পরিবর্তন। যে কোনো বয়সের পাঠকের জন্য উপযোগী উপন্যাসটি পড়া শুরু করলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত উঠতে মন চাইবে না।
অধ্যাপক দীপক কুমার নাগ |
অর্হণা প্রকাশ করেছে পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা। প্রকাশক : শ্যামল পাল। দাম : ২৫০ টাকা। পাবেন অমর একুশে গ্রন্থমেলায় পুথিনিলয় এর স্টলে।