ড. মোহাম্মদ আমীন রচিত একটি গবেষণাগ্রন্থ। চর্যাপদ কোথায় বা কোনস্থানে রচিত হয়েছে, তা গ্রন্থের বিষয়বস্তু। আবিষ্কারের পর থেকে চর্যাপদের দাবি নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। বাংলা ছাড়াও আরো কয়েকটি
ভাষাভাষী চর্যাকে নিজেদের ভাষার নিদর্শন বলে দাবি করেছেন। হিন্দিভাষীরাও চর্যাকে তাদের ভাষার নিদর্শন দাবি করেন। ড. মোহাম্মদ আমীন এসব দাবিকে চর্যাপদের গুরুত্ব পরিবর্ধক হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, চর্যাপদকে একাধিক ভাষাভাষী নিজেদের ভাষার নিদর্শন দাবি করলেও চর্যা যে, বাংলার আদি নিদর্শন, এ দাবি নস্যাৎ হয়ে যায় না। বরং চর্যার গ্রহণযোগ্যতা ও গুরুত্ব আরো বৃদ্ধি পায়। চর্যাকে একাধিক ভাষাভাষী নিজেদের নির্দশন হিসেবে দাবি করতেই পারেন এবং তা ঐতিহাসিক কারণেই অযৌক্তিক নয়। এতে বরং বাংলা ভাষার গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। তিনি এসব দাবি বিতর্কে না গিয়ে নতুন একটি বিষয়ের অবতারণা করেছেন। সেটি হচ্ছে, চর্যাগুলি কোথায় লিখিত হয়েছে? তিনি তৎকালীন রাজনীতিক কর্মকাণ্ড, রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম, ধর্মীয় প্রেক্ষাপট, সাহিত্যচর্চার প্রকৃতি, চর্যারচনার অনুকূল স্থান প্রভৃতি থেকে ঐতিহাসিক ঘটনার পরম্পরা উল্লেখ করে প্রমাণ করেছেন যে, চর্যাপদ চট্টগ্রামে রচিত হয়েছে।
বাংলা ভাষার উৎপত্তি যখনই হোক, চর্যাপদ যে, বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই এবং এর বিপরীতে অন্য কোনো গ্রহণযোগ্য প্রমাণক না পাওয়া পর্যন্ত চর্যাপদকেই বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন গণ্য করতে হবে। তাই ‘চর্যাপদ’ অদ্যাবধি বাংলা ভাষার প্রাচীন নিদর্শনের আসনে অধিষ্ঠিত। লেখক বলেছেন, চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ইতিহাস সুপ্রাচীন। সুস্পা কাহ্নপো রচিত ‘পাগসাম-জোন-জন’ ও লামা তারানাথ লিখিত ‘কাবাভদুন দন’ নামের তিববতীয় গ্রন্থে চট্টগ্রামে বৌদ্ধ প্রাধান্য ও তাদের ধর্মমুখী সাহিত্যচর্চার কথা উল্লেখ আছে।এখন প্রশ্ন হলো, চর্যাপদ বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন হলে নেপালে গেল কীভাবে? এর উৎস-ভাষা এবং লেখার স্থানই বা কোথায়? এবং চর্যাপদের বাক্যবিন্যাস ও শব্দ সংহিতার উৎস কী প্রভৃতি আলোকপাত করা হয়েছে।
চর্যা বাংলা হলে এ বাংলায় কোন অঞ্চলের প্রভাব বেশি রয়েছে তা নিয়েও আলোকপাত করা হয়েছে। লেখক বলেছেন, চর্যাকারদের অধিকাংশ বাঙালি ছিলেন। তবে, কয়েকজন বাংলা ভাষায় লেখেননি। যারা বাংলা
ভাষায় লিখেননি, তারা বাঙালি না-ও হতে পারেন আবার বাঙালিও হতে পারেন। বাঙালি না হলে যে বাংলা ভাষায় লিখবেন না বা লিখতে পারবেন না এমন বলা যায় না। কারণ তাঁরা যেখানে অধ্যয়ন করেছেন সেটি সম্মিলিত অধ্যয়নস্থল ছিল। তা না হলে এগুলো একক পুঁথিতে স্থান পেত না। তখন তো আর বর্তমান সময়ের মতো এত সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না। তাই ভিন্নভাষী হলেও একই ধর্মাবলম্বী ছিলেন বা অভিন্ন মতানুসারী ছিলেন বলে তারা একই স্থানে বসে চর্যা রচনা করেছেন। তাছাড়া সেসময় একদেশে বসে অন্যদেশের ভাষায় লেখা ছিল অর্থহীন। এবার প্রশ্ন আসে, সেকালে এমন মহামিলন স্থান কোথায় ছিল? লেখক যুক্তি, প্রমাণ এবং ঐতিহাসিক বিবরণ দিয়ে প্রমাণ করেছে স্থানটি ছিল দক্ষিণ চট্টগ্রাম।
ড. মোহাম্মদ আমীন |
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন