শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৯

বাংলা ভাষার মজা , ড. মোহাম্মদ আমীন

বইয়ের নাম : বাংলা ভাষার মজা

লেখক : ড. মোহাম্মদ আমীন
প্রকাশক : পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.
প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ
ভূমিকা : আবুল কাসেম ফজলুল হক
মূল্য : ৫৫০টা।
প্রথম প্রকাশ : সেপ্টেম্বর ২০১৯।
আলোচনা 
সুর, ছন্দ, অর্থদ্যোতনা আর উচ্চারণ বৈচিত্র্যের বহুমুখীনতা বিবেচনায় বাংলা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষা। প্রতিটি বাংলা শব্দ ব্রহ্মের
সৌকর্ষে অভিভূত করে দিতে পারে যে কাউকে, যদি তা শৈল্পিক সজ্জায় কিরণিত করা যায়। বাংলা শব্দ, বাক্যে বসে ব্রহ্মের মতো হয়ে কত না রঙের মেলা ঘটাতে পারে, সৃষ্টি করতে পারে কত মজার লীলা, মনোহর কাহিনি, হৃদয় বিদারক সাহিত্য- তা বাংলাভাষী মাত্রই অবগত। প্রকৃতির সঙ্গে একীভূত বাংলা ভাষা প্রকৃতির মৃন্ময়ে গড়ে তুলতে পারে নানা মজার বুলি, প্রবাদ, প্রবচন, বাগধারা, ছড়া, কবিতা; বাংলা গান প্রকৃতির না প্রকৃতি বাংলা গানের- তা নিয়েও সংশয় সৃষ্টি হতে পারে।
প্রাচীন কাল হতে বাংলার এমন বৈচিত্র্যময় সৃজনশীলতা শুধু বাংলা ভাষার একক অবদান নয়, বাংলার প্রকৃতি, বাংলার ইতিহাস আর বাংলার মানুষের আচার-আচরণ এবং সৃজনশলতার অসংখ্য প্রমাণ প্রতিটি শব্দের মর্মে মর্মে বিনীত মুগ্ধতায় দ্যোতিত হয়।  সাজাতে জানলে একটি সাধারণ শব্দও বাক্যে বসে পারমাণবিক বোমার চেয়ে বিশাল শক্তি লাভ করতে পারেÑ তবে এ শক্তি ধ্বংসের নয়, সৃষ্টির, কান্নার নয়, উল্লাসের। শুধু তাই নয়, বাংলার প্রতিটি শব্দ এক একটা ইতিহাস- মহাভারত, রামায়ণ এবং পরবর্তীকালে প্রাত্যহিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি ঘটনাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এক একটি শব্দ। কলকল করে জলে ভরে বলে কলস, লেডি ক্যানিং-এর প্রিয় ছিলেন বলে পানতুয়া আকৃতির মিষ্টির এখন ল্যাডিকোনি, দাউদ খান থেকে দাদখানি; এমন হাজার হাজার উদাহরণ দেওয়া যায়।
এটাই বাংলা ভাষার মজা এবং চিরায়ত সৌন্দর্য। এই মজা আর চিরায়ত সৌন্দর্যের বিষয়টি কত মনোরম, মধুর, সরস এবং শৈল্পিক তা-ই বইটিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‘বাংলা ভাষার মজা’ শিরোনামের বইটি শুধু বাংলা ভাষার মজাতে সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি। গল্প, কবিতা, ইতিহাস, ছড়া, প্রবাদ-প্রবচন, পৌরাণিক কাহিনি প্রভৃতির সঙ্গে বাংলা বানান, বাংলা শব্দের অর্থ, শব্দের বিশ্লেষণ, প্রয়োগ, বিবর্তন, ভাষিক সৌন্দর্যের পারম্পরিক অনুবোধ এবং বাক্যে শব্দচয়নে শব্দ, প্রবাদ-প্রবচন ও উৎস-ইতিহাসের গুরুত্ব সম্পর্কে জানার জন্যই বইটি পাঠ করা আবশ্যক বলে আমি মনে করি।
যা আছে বইটিতে সেগুলোর শিরোনাম নিম্নে দেওয়া হলো :
অপ যে রূপ- অপরূপ
গরিবের তিন বল
আমন্ত্রণ ও নিমন্ত্রণ
উপমা ও তুলনা
বামপন্থি বনাম ডানপন্থি
মরা গোরু হেঁটে যায়
আঁখির ভিতর পাখির বাসা
জয় বাংলা একুশে
হরির উপরে হরি
মরহুম বিবাহিত স্ত্রী
নির্দেশ ও নির্দেশনা
আমার ছেলে ছেলেটি, বেড়ায় যেন গোপালটি
বাচ্চা শিশু
জল পানি
আপনি ভাই খেয়েছেন, আমিও ভাই খেয়েছি
আমি খাসি আমার সাহেব বলদ
দায়িত্ব ও কর্তব্য
প্লিজ বসেননা
রবীন্দ্রনাথের নিচ নীচ
শুভসন্ধ্যা এবং শুভ সন্ধ্যা
ভাতের জন্য ভাতার
মঞ্জুভাষণ
GHOTI শব্দের উচ্চারণ
সাত সকাল
ভালোবাসা ও প্রেম
ব্রাশ ফায়ার ও ব্রাস্ট ফায়ার
চিকামারা
চিকুনগুনিয়া
দিকবিচিত্রার খুঁটিনাটি
ময়না ও ময়নাতদন্ত
দায়িত্ব এবং কর্তব্য
অবাকে বাক্ নেই, হতবাকে হত
কলম চোরের হাতিয়ার
কুম্ভকর্ণের ঘুম
নদ ও নদী
লক্ষ লক্ষ্য এবং উপলক্ষ্য
সাহাবা থেকে সাহেব

চার্মিং গার্ল থেকে ডাইনি
সস্তার তিন অবস্থা
কৃষ্ণ থেকে কৃষ্ণচূড়া
একজন ও এক জন
যতদিন রবে পদ্মা যমুনা
ঘড়েল
বাসর রাতের বিড়াল
মারের সাগর
কদলি
ঠান্ডায় গ-গোল

পটোল তোলা
মিছিল নিয়ে ধর্মঘট
ভীমরতি ও নিরানব্বইয়ের ধাক্কা
কপোল ভিজিয়া গেল নয়নের জলে
কাক কাকবিষ্ঠা উচ্ছিষ্ট ও বমি
ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল
মূর্তি ও ভাস্কর্য
পাকিস্তান আফগানিস্তান এবং হিন্দুস্থান
কুসংস্কার বাণী
কুম্ভীলক

বাংলা বাঙলা বাঙ্গলা ও বাঙ্গালা
আর্ষপ্রয়োগ
নিপাতনে সিদ্ধ
আম পচে বেল
বাবুল বিস্কুট কোম্পানি শব্দ যমক
মালাউন ও কাফের
শুদ্ধ বানান শুদ্ধ বাংলা
সাতসতের
ইদ এবং ঈদ
হরিঘোষের গোয়াল

বাল আবাল
ফুলের শুভেচ্ছা এবং ফুলেল শুভেচ্ছা
লবণ থেকে লাবণ্য
ইকড়ি মিকড়ি
বিনত ও বিনয়াবনত
অশ্রু অশ্রুজল অশ্রুবারি
যত দোষ নন্দ ঘোষ
যবন-এর যবনিকা
সংজ্ঞা নয় সংজ্ঞার্থ
বাসা বাড়ি

ব্যবহারিক ও ব্যাবহারিক
পার্থক্য ও তফাত
সর্বজনীন বনাম সার্বজনীন
প্রবন্ধ নিবন্ধ ও প্রবাদ-প্রবচন
এপার ওপাড়
চীন তুমি চিন
সুচরিতাসু বনাম সুচরিতেষু
রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুবরণ করেননি
খাঁটি গরুর দুধ
পরিবহণ না পরিবহন
আল্পস পবর্ত থেকে অল্প

জাত শব্দ
গর্ব ও গৌরব
সাবেক ও প্রাক্তন
গোরুর খোঁজে গবেষণা
ঘটি-বাঙাল আর জগা বাবুর খিচুড়ি
কলিযুগের কলিক্ষণ
শুভঙ্করের ফাঁকি
রাজা বাদশাহ শাহেনশাহ
ও-কার বিড়ম্বনা
বারোয়ারি
লিঙ্গ-জ্ঞান
জনাব বনাম জনাবা
আমার কথা ফুরালো নটে গাছটি মুড়ালো
আর্য
চড়ুইভাতি
বক ধার্মিক
চিলেকোঠা
অন্নচিন্তা চমৎকারা
কাক ও কাক ভূষণ্ডী
উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে
শনির দৃষ্টি এবং পোড়া শোল
শ্রীঘর
জয়ন্তী
বানপ্রস্থ
বাংলা ভাষার মজা
বিশেষ কচুর সভাপতি
প্রতয়ন ও প্রত্যায়ন
উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য
জোড়কলম : খিচুড়ি শব্দ
টিকটিকি ঠিক ঠিক
গোলাম আজম জেলে
সাহেবের সিংহ ভাগ
একজন ও এক জন

রবিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

কন্দর্পের বাণ ও কলিযুগের গল্প / ড. মোহাম্মদ আমীন



মানুষের জীবন নানা অভিজ্ঞতায় সঞ্চিত বৈচিত্র্যময়
কাহিনির অসীম একটি পুস্তক যে পুস্তকে ঘটনারাজি
অনেকটা হার্ডডিস্কের মতো সুপ্ত অবস্থায় রক্ষিত থাকে প্রতিনিয়ত আমাদের অভিজ্ঞতা বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জীবন-পুস্তকের পরিধি আর ঘটনার ঘনঘটা  এই পুস্তক ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ অধ্যয়ন করতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তা ভাষিক বিবরণে কাগজে মুদ্রিত হয় প্রাত্যহিক জীবনে চলার পথে নানা অভিজ্ঞতার আলোকে আমার জীবনপুস্তকে সঞ্চিত কয়েকটা ঘটনাকে এখানে ভাষিক লাস্যে সর্বসাধারণের পাঠযোগ্য করে দেওয়া হলো

ঘটনাগুলো আপনার মনে কেমন অনুভূতি সৃষ্টি করবে তা আমি জানি না, কিন্তু আমার জীবনে ঘটে যাওয়া কাহিনিকে বদলে দেওয়ার শক্তি আমার নেই যাই লাগুক, ঘটনাগুলো আপনাকে আমার জীবনপুস্তক সম্পর্কে ধারণা দেবে- এটি নিশ্চিত বলতে পারি। 


ড. মোহাম্মদ আমীনের রায়োহরণ /প্রণব রায়



আমরা গড়ে উঠি আমাদের চারপাশের পরিবেশকে কেন্দ্র করে। পরিবেশের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠে আমাদের
মানসিকতা। যদি সে মানসিকতা ধর্মীয় কুসংস্কারের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়Ñ তাহলে আহত হয়  বিশ^বিবেক। সকল কুসংস্কার ও গোঁড়ামীর বেড়াজাল ছিন্ন করে বিশ^মানব তৈরি করার যে বাক্শৈলী প্রকাশিত হয়েছে রায়োহরণ উপন্যাসে তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। মুক্তচিন্তার লেখক ড. মোহাম্মদ আমীন সকল ধর্মীয় গোঁড়ামীর ঊর্ধ্বে উঠে সাবলীলভাবে বিশ^ধর্মের জয়গান করেছেন। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, উপন্যাসের চরিত্রগুলো আমাদের অপরিচিত নয়, পরিচিত প্রিয় চরিত্র থেকে যখন কোনো ধারণা আসে তা মনে গেঁথে যায়। লেখকের এই প্রগতিশীল ধারা অব্যাহত থাকুক এটাই কাম্য। ড. মোহাম্মদ আমীন এই উপন্যাসের মাধ্যমে যে শিক্ষা দিয়েছেন তা যদি সংশ্লিষ্টরা অনুভব করতে পারেন, তাহলে কতই না কল্যাণ হবে তাদের, মঙ্গল হবে পৃথিবীর।



গল্পে গল্পে বাংলা বানান / ড. অসিত কুমার পাল

‘গল্পে গল্পে বাংলা বানান’ বাংলা বানান শেখার জন্য লেখা  একটি বই, কিন্তু বইটির কয়েক লাইন পড়লে আপনি অবাক হয়ে দেখবেন, এটি বানান শেখার এমন একটি বই যা কোনো রূপকথার গল্পকেও হার
মানায়। তবে, এটি বানান শেখার বই, কিন্তু কোনো সাধারণ বই নয়। এর লেখক ড. মোহাম্মদ আমীন। ড. মোহাম্মদ আমীনের বানান শেখার কৌশল সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তারা বুঝতে পারবেন তিনি বাংলা বানানের মতো জটিল বিষয়কেও কত সহজ করে তুলতে পারেন। তার কয়েকটি ক্লাসে আমার উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছে।

এই বইটি শিশুকিশোরদের উপযোগী করে রচিত হলেও যে-কোনো বয়স ও পেশার লোকদের  প্রয়োজন মেটাতে ও আগ্রহ সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে। ড. মোহাম্মদ আমীন বর্তমানে বাংলা বানান ও ব্যাকরণে শ্রেষ্ঠ গবেষকদের অন্যতম। ইউনিভার্সিট অব অটোয়ার ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা ‘গল্পে গল্পে বাংলা বানান’ বইটি পড়ে আমার মনে হয়েছিল-- ছোটোবেলায় এমন একটি বই যদি আমি
হাতে পেতাম তাহলে বাংলা শেখায় জানায়  এবং বোঝায় আমার এত কষ্ট হতো না। দেখামাত্র লুফে নিলাম।  বানান শেখা কত সহজ, কত সহজে বানান শেখা যায় তা বইটি না পড়লে বোঝা যাবে না।
ব্যাকরণ ও বানান যে- কোনো ভাষার জন্য কষ্টকর, কিন্ত গল্পে গল্পে বাংলা বানান বইটি পড়লে আপনার এ ধারণা পাল্টে যাবে। মনে হবে,  বাংলা বানান শেখার মতো আনন্দ আর কিছু নেই। পরিবেশনার গুণে অনেক জটিল বিষয়ও সহজসাধ্য হয়ে যায়, ড. মোহাম্মদ আমীন তার এই বইটিতে তা আবারও প্রমাণ করে দিয়েছেন। আপনার সন্তানকে সহজানন্দে বাংলা শেখায়, বোঝায় এবং জানায় আগ্রহী করে তোলার জন্য একশ টাকা মূল্যের বইটি হাতে তুলে দিন, আপনিও তুলে নিন।বইটির প্রকাশক পুথিনিলয়, পাবেন একুশে গ্রন্থমেলায় ৩০১-৩০৮ নম্বর স্টলে। রকমারি হতেও নিতে পারেন। অথবা যোগাযোগ করতে পারেন- নিশিথ, ০১৯৬৪-২৫৮৬৯৭।

শনিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৮

অর্হণা কেন পড়বেন / ড. মোহাম্মদ আমীন

অর্হণা
অর্হণা, . মোহাম্মদ আমীন-এর লেখা একটি উপন্যাস। উপন্যাসটি কেন পড়বেন? এর আগে যার ড. আমীনের লেখা স্যমন্তক
পড়েছেন, তারা মাত্রই বুঝতে পারছেন অর্হণা কেন পড়বেন। উপন্যাসে পাঠককে আকৃষ্ট করার, ঘটনার সঙ্গে একিভূত করার, জীবনবোধে উদ্দীপ্ত করার শেখার এবং জানার যত উপাদান থাকা প্রয়োজন তার সবকটি অর্হণা উপন্যাসে পাবেন। এটি স্যমন্তক সিরিজের দ্বিতীয় উপন্যাস। গ্রন্থটির আলোচনা করতে গিয়ে, হায়াৎ মামুদ লিখেছেন, অর্হণার পাণ্ডুলিপিটি, আমার বয়স ত্রিশ বছর কমিয়ে দিয়েছিল পড়তে পড়তে আমি পৌঁছে গিয়েছিলাম বিংশ শতকের সত্তরের দশকে আমার বর্তমান অবস্থানকে ভুলিয়ে দিয়েছিল উপন্যাসটির বৈচিত্র্যময় পরম্পরা এমন অলৌকিক কাণ্ড যে উপন্যাস ঘটাতে পারে, সেটি কত আকর্ষণীয় এবং আত্মহরি হতে পারে তা সহজে অনুমেয় আমি ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে আমি যত পাণ্ডুলিপি পড়েছি, তন্মধ্যেঅর্হণাযে কোনো বিবেচনায় নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠ শ্রেষ্ঠত্বের অনেকগুলি কারণ আছে আগে একটা বলেছি আমি মনে করি, অর্হণাযিনিই পড়বেন, তাঁর কাছেই ভালো লাগবে, অভিভূত হবেন কারুময় সৌন্দর্য এটি অর্হণা পাণ্ডুলিপিটাকে শ্রেষ্ঠ মনে হওয়ার অন্যতম কারণ ঘটনা, খ্যাতিমান চরিত্রবর্গ, চরিত্রসমূহের সরব উপস্থিতি, রাজসিক আলোচনায় সর্বজনীন হিত, সাড়ম্বর দৃশ্যপট, দৃশ্যপটের মনোহর নৈসর্গিকতায় শহুরে বিমোহন, দলিতদের প্রতি মমতা, কিছু স্পর্শকাতর সম্পর্ক, হৃদয় আলোড়িত কথোপকথন, বুদ্ধিমত্তার অপূর্ব নিদর্শনপ্রসূত দার্শনিক উপলব্ধি, মনোবৃত্তিক উদারতায় হৃদয়ভিত্তিক জটিলতার স্বরূপ, প্রেম-ভালোবাসার নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং শিউরে তোলা পরিঘটনার পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহ প্রভৃতি আমাকে প্রবলভাবে মুগ্ধ করেছে।অর্হণা যিনিই পড়ুন, মুগ্ধ হবেন, অভিভূত হবেন সোল্লাস প্রাপ্তির মাদকীয় ভাবনায়

স্যমন্তক এর নায়িকা রচনা।অর্হণাতেও রচনা প্রধান চরিত্রের একজন। প্রফেসর সাহিদা সুলতান অর্হণা সম্পর্কে বলেছেন, “অর্হণার  পাণ্ডুলিপি পড়ে আমি আনন্দ, রোমাঞ্চ আর ঋদ্ধ সঞ্চয়নে অভাবনীয়ভাবে অলংকৃত হয়েছি। এমন বৈচিত্র্যময় প্রেক্ষাপট একসঙ্গে আর কোনো উপন্যাসে পাইনি। বিশেষ করে মনোহর বাক্য-বিন্যাস হৃদয়মথিত কথোপকথন এবং হৃদয়ালোড়িত স্পর্শকাতর সম্পর্ক আমাকে মুগ্ধতার শেষ প্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রায় পুরো পৃথিবী এই উপন্যাসের ক্ষেত্র। উভয় বাংলার কালজয়ী কবিসাহিত্যিকগণ এই উপন্যাসের মূল চরিত্র। এছাড়াও রয়েছে বিশ্বসাহিত্যের নামকরা কয়েকজন পণ্ডিত।”


বিংশ শতকের অর্ধশতাধিক খ্যাতিমান সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, কুটনীতিবিদ, রাজনীতিক, চিকিৎসক, সাংবাদিক এবং তাদের গুণান্বিত আলোচনার বিরল বাক্যেঅর্হণাসজ্জিত হয়েছে পাঠকদের জন্য। উপন্যাসের নায়ক-নায়িকা থেকে প্রায় সব চরিত্র খ্যাতিমান
পরিচিত। এমন গুণবান প্রসিদ্ধ ব্যক্তিদের নিয়ে লেখা উপন্যাস অর্হণাপড়তে শুরু করলে নিজের অজান্তে চলে যেতে হয় সে গুণবানদের আলাপচারিতায়--- ঢাকা থেকে কলকাতা হয়ে লন্ডন, জার্মান আমেরিকা; আফ্রিকা থেকে আরো সুদূরে, জ্ঞানবানদের একান্ত আসরে। এবার বলছি এই উপন্যাসের কয়েকজন চরিত্রে নাম আহমদ ছফা, অন্নদাশঙ্কর রায়, . মফিজ আলী চৌধুরী, আহমদ শরীফ, কবীর চৌধুরী, ডাক্তার নুরুল ইসলাম, শামসুর রাহমান, সত্যেন সেন, রণেশ দাশগুপ্ত, আলাউদ্দিন আল আজাদ, সৈয়দ শামসুল হক, আবদুল গাফফার চৌধুরী, সরদার ফজলুল করিম, মযহারুল ইসলাম, আবদুল মাননান সৈয়দ, নরেন বিশ্বাস, আল মাহমুদ, হুমায়ুন আজাদ, আবদুল কাইউম, আসকার ইবনে সাইখ, শফিউদ্দীন আহমেদ, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, প্রফেসর গ্রিয়েল, প্রফেসর ব্রুম, প্রফেসর মিন্ড্রা, শ্রাবন্তীনাহা, শাহিদা সুলতানা, অরুণাভ সরকার, আবদুল আলিম, নাজিম উদ্দিন মোস্তান, ওসমান গনি, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, হায়াৎ মামুদ, বুদ্ধদেব বসু, সৈয়দ আলী আহসান, কে এম শিহাব উদ্দিন, আখতারুজ্জামান বাবু, প্রফেসর কোবাইসি মাসাহিতো, অধ্যাপক টিআই চোধুরী, ভাষাবিষারদ প্রফেসর রচনাসহ আরও অনেক কালজয়ী কবি-সাহিত্যিক এই উপন্যাসের চরিত্র।

অর্হণা উপন্যাসের ভূমিকা লিখেছেন হায়াৎ মামুদ। তিনি নিজেও উপন্যাসের একটি চরিত্র। তাঁর বর্ণনায় অর্হণা কেমন উপন্যাস তা জানা যাক। তিনি বলেছেন, চরিত্র দিয়ে বর্ণিত ভূমিকাসমৃদ্ধ উপন্যাস ইতোঃপূর্বে আমি পড়িনি। তাইঅর্হণাছিল আমার কাছে
ড. মোহাম্মদ আমীন ও শ্যামল পাল
একটি নতুন ধারণার বিকাশ।সমাজ, রাষ্ট্র, সাহিত্য সংস্কৃতির সঙ্গে প্রেম-ভালোবাসা আর মানবীয় মূল্যবোধের সুষমিত প্রগাঢ়ত্বের সঙ্গে এতগুলো বিস্ময়কর চরিত্রের চরিত্রায়ণ উপন্যাসটিকে করে তুলেছে অনবদ্য। চরিত্রের সঙ্গে কথোপকথন, সজ্জা আর তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা এতই নিবিড় যে, অনুভবকেও হার মানিয়ে দেয়। এমন একটি উপন্যাস বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করবে -- বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। আমি কামনা করি বা না- করি, উপন্যাসটি যোগ্যতাবলে পাঠকের হৃদয়ে নিজের আসনটি গেড়ে নিতে সক্ষম হবে। আমি মনে করি, কালক্রমে . মোহাম্মদ আমীনের অর্হণাবাংলা সাহিত্যের অর্হণা হয়ে সবার মনে সাড়া দিতে সক্ষম হবে”  অধ্যাপক টিআই চৌধুরীর মতে, উপন্যাসে চরিত্রবর্গের আলাপচারিতায় সমকালীন সাহিত্য-সংস্কৃতি, সংস্কার-কুসংস্কার, ধর্ম, আর্থ-রাজনীতি সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে যে তথ্য-উপাত্ত নির্দেশিত হয়েছে তা গভীর পর্যবেক্ষণের সঙ্গে অভাবিত আন্তরিকতাপুষ্ট ঋদ্ধ দ্যোতনায় দ্যোতিত। সর্বোপরি উপন্যাসের নায়িকা কল্পনার সঙ্গে নায়কের ভীষণ স্পর্শকাতর সম্পর্ক পাঠককে নুতন ভাবনায় মারাত্মক দ্বিধায় ফেলে দেবে। অর্হণার আলোচনায় বিশিষ্ট সমালোচক এরশাদ হোসেন আবীর লিখেছেন, এমন জীবন্ত উপন্যাস আমি আর পড়িনি।  পরিচিত নায়ক-নায়িকাদের নিয়ে লেখা উপন্যাস পড়তে কত ভালো লাগে, তা না পড়লে শুধু বলে বা লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এমন উপন্যাস যে কোনো পাঠকের মনে মনোহর শিহরন জাগিয়ে তুলে  প্রেমে আর বোদ্ধমায় সমৃদ্ধতায়। গ্রন্থটির প্রতিটি লাইন অমিয় বাণীর চিরন্তন বাস্তবতা। প্রতিটি লাইন স্মরণীয় বাণী হয়ে অনেকদিন মোহিত রাখবে পাঠককে।

উপন্যাসটি কেমন হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলব, ভাষা মানুষকে এখনো এমন হাতিয়ার দিতে পারেনি, যদ্দ্বারা মানুষ তার সব
অধ্যাপক দীপক কুমার নাগ
উপলব্ধিকে বাক্য-ভাষায় অন্যের কাছে প্রকাশ করতে পারে। তেমনি অর্হণার পাণ্ডুলিপি পারে আমার অনুভবে সঞ্চারিত আবেশরাশিকে সম্পূর্ণরূপে কথায় প্রকাশ করতে পারব না। শুধু বলবো, অসাধারণ, অসাম, হৃদয়কাড়া একটি উপন্যাস।যার প্রত্যেকটি লাইন নীরব চন্দ্রিমায় রাতের কোলে ঘেষেও জোছনাকে বাক্য বানিয়ে পাঠকের মনে বিপুল ঝড় তুলে দিতে নিমিষ চিন্তার মতো কিন্তু প্রকৃতির মতো বিরল স্থায়িত্বে। তাই বইটি কেমন? প্রশ্নের উত্তরে দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারি, এর অবিকল উত্তর পেতে হলেঅর্হণাপড়তে হবে। অর্হণা এমন একটি উপন্যাস যা আপনাকে বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবিসাহিত্যিক পণ্ডিতবর্গের বন্ধু বানিয়ে দিতে সক্ষম হব। আমি বলব, অর্হণা শুধু উপন্যাস নয়, পাঠকের তীর্থভূমি। যেখানে প্রকৃতি বিছিয়ে রেখেছে তার অশেষ ঐশ্বর্য থরে থরে।অর্হণারূপ উপন্যাসের তীর্থক্ষেত্র থেকে আপনি পেতে পারেন সাহিত্যের নির্ঝর সমৃদ্ধি, বিমল মুগ্ধতা। পরিচিত হতে পারেন বাংলা বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে। উপন্যাসটি পড়লে আপনি জীবনবোধে উদ্দীপত্ত হবেন, কল্যাণে বারিত হবেন এবং মননশীলতায় আসবে মুগ্ধকর পরিবর্তন। যে কোনো বয়সের পাঠকের জন্য উপযোগী উপন্যাসটি পড়া শুরু করলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত উঠতে মন চাইবে না।

অর্হণা প্রকাশ করেছে পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা। প্রকাশক : শ্যামল পাল। দাম : ২৫০ টাকা। পাবেন অমর একুশে গ্রন্থমেলায় পুথিনিলয় এর স্টলে।